বিশ্বকাপে প্রথম গোলদাতা লরাঁ (কালচে জার্সি)। ফাইল ছবি


ফুটবল যেদিন বিশ্বের হয়েছিল


বিশ্বকাপে প্রথম গোলদাতা লরাঁ (কালচে জার্সি)। ফাইল ছবি

বিশ্বকাপে প্রথম গোলদাতা লরাঁ (কালচে জার্সি)। ফাইল ছবি
১৯৩০ সালের এই দিনে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখেছিল প্রথম গোল। উদ্‌বোধনী ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছিলেন ফ্রান্সের লুসিয়েঁ লরাঁ
পেশাদার ফুটবলারদের এখন সৌভাগ্যবানই বলা চলে। বিশেষ করে ইউরোপ বা লাতিন আমেরিকার ফুটবলারদের। পছন্দের খেলাটাকে অন্তত পেশা হিসেবে নিতে তো পারছেন! ফুটবলের বাণিজ্যিকীকরণের ষোলোআনা সুবিধা বুঝে নিচ্ছেন মেসি-রোনালদোরা।
কিন্তু এক সময় এমনটা ছিল না। খেলাকে যে পেশা হিসেবে নেওয়া যেতে পারে, জনমনে এমন ধারণা ছিলই না। সবাই অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি অবসর সময়ে ফুটবল খেলতেন।

লুসিয়েঁ লরাঁর কথাই ধরুন না। বিখ্যাত গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিউগোর শ্রমিক ছিলেন লরাঁ। অবসর সময়ে খেলতেন ফুটবল, তাও আধাপেশাদার ক্লাব সিএ প্যারিসের হয়ে। উইঙ্গার হিসেবে ছিলেন দুর্দান্ত। ডানপ্রান্ত থেকে হুট করে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে ত্রাস ছড়াতে পারতেন। ততদিনে ফুটবলের বাড়ন্ত জনপ্রিয়তা দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল নিয়ে একটা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে ফিফা। যার ফলাফল, ১৯৩০ বিশ্বকাপ।

সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান লরাঁ ও তাঁর বড়ভাই জ্যাঁ লরাঁ। ছোট ভাইয়ের মতো গোল করা না, বরং গোল ঠেকানোর দিকেই যার ছিল মনোযোগ।

বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আয়োজনের অংশ হতে পারলেও লুসিয়েঁ বা জ্যাঁ – কেউই জানতেন না আদৌ এর কোনো ভবিষ্যৎ আছে কি না। ফলে নির্দ্বিধায় নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে ফুটবলে অখণ্ড মনোনিবেশ করতে পারেননি। লুসিয়েঁ লরাঁই যেমন, বিশ্বকাপের সময়টায় নিজের কোম্পানি পিউগোর কাছ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। শর্ত ছিল, বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন, কিন্তু সে ছুটির মধ্যে কোম্পানি কোনো টাকাপয়সা দিতে পারবে না। লরাঁও মেনে নিয়েছিলেন সন্তুষ্টচিত্তে। পাড়ি জমিয়েছিলেন উরুগুয়েতে, বিশ্বের সেরা সেরা ফুটবল তারকারা বিশ্বকাপ খেলার জন্য জমায়েত হয়েছে যেখানে।

উদ্বোধনী ম্যাচেই লরাঁর ফ্রান্স মুখোমুখি হয় মেক্সিকোর। আজকের এই দিনেই হয় ম্যাচটা, ঠিক নব্বই বছর আগে। ফুটবলকে যে মানুষ তখনও শুধুমাত্র অবসরযাপনের উপলক্ষ হিসেবেই দেখত, পেশাদারি চোখে নয়, তার প্রমাণ ম্যাচটা দেখতে মন্টিভিডিওর এস্তাদিও পোসিতোসে হাজির হয়েছিল মাত্র কয়েক হাজার দর্শক। এখন সেটা কল্পনাও করতে পারবেন? বিশ্বকাপের একটা ম্যাচে মাত্র চার হাজার দর্শক?
ম্যাচের উনিশ মিনিটেই ফ্রান্সের গোলরক্ষক অ্যালেক্স থেপো পাস দেন সতীর্থ এক ডিফেন্ডারকে, যিনি বলটা উড়িয়ে পাঠান উইঙ্গার আর্নেস্ত লিবেরাতির কাছে। লিবেরাতির পাস ধরে মেক্সিকোর গোলরক্ষক অস্কার বোনফিলিওকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান লরাঁ। সেটাই ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম গোল।

পরে লরাঁর দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরে গোটা বিশ্ব ফুটবল ও বিশ্বকাপকে জনপ্রিয় করেছেন রোনালদো, ম্যারাডোনা, পেলে, প্লাতিনি, মেসি, বেকেনবাওয়ার, মালদিনি, ক্রুইফের মতো শত শত তারকা।

কিন্তু ফুটবলীয় বিপ্লবের শুরুটা করেছিলেন ওই একজনই। লুসিয়েঁ লরাঁ।

Post a Comment

Automatic Ads ( 728 x Auto )
Automatic Ads ( 728 x Auto )
Automatic Ads ( 728 x Auto )