বদলে যাও, বদলে দাও
"আমি সেবার এসএসসি দিয়েছি। প্রথম পাবলিক পরীক্ষা, মনে তাই অনেক টেনশন- কী হয় কী হয় কে জানে! তো এরকমই একটা সময়ে, সেদিন এসএসসির রেজাল্ট দেবে-এইরকম একটা দিনে আমি আর আমার বন্ধু রাস্তা দিয়ে হাঁঁটছিলাম।
আমার কোক খেতে অনেক ভালো লাগে। যথারীতি প্রচণ্ড টেনশনে আমার সাথে ছিল একটা কোকের বোতল। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি- নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, কিন্তু আমার মাথা থেকে ওই রেজাল্টের বিষয়টা আর যাচ্ছেই না! টেনশনে হাঁটতে হাঁটতে এক টান দিয়ে পুরো কোকটা শেষ করে বোতলটা ছুঁড়ে মারলাম রাস্তার আরেক কোণায়।
আমার বন্ধুটি কিছুই বললো না। ওকে দেখলাম একটু পরে সেই কোণায় যেতে। রাস্তা পার হলো, আমারই ফেলে দেয়া বোতলটা তুলে নিলো, তারপর আমাকে বললো, “এবার চল, এগোই।”
আমি মনে মনে ভাবলাম, বন্ধুটির বাসায় মনে হয় খালি প্লাস্টিকের বোতল লাগবে, ওর আম্মু বোতল এনে দিতে বলেছে, এইজন্যেই বেচারা কষ্ট করে বোতল কুড়িয়ে নিয়ে আসলো। আমার ধারণা ভুল ছিল।
আমার বন্ধুটি একটু পরে দূরে রাস্তার উল্টোদিকে একটা ডাস্টবিন দেখলো। সে আবারো রাস্তা পার হলো, ডাস্টবিনে বোতলটা ফেললো, তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “চল!”
পুরো ঘটনাটা বলতে গেলে আমার বুকের মাঝখানটায় এসে লাগলো। একেবারেই নীরবে আমার বন্ধুটি প্রচ্ছন্ন চপেটাঘাত করলো আমাকে, বিষয়টা বেশ গায়ে লেগেছিলো সেদিন। আম্মু-আব্বু থেকে শুরু করে অনেকেই অনেকবার বলেছে আমাকে, ময়লাগুলো জায়গামতো ফেলতে- কিন্তু সেগুলো এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছি, যথারীতি।
কিন্তু আমার এই বন্ধুটি, একেবারেই নীরবে দারুণ একটা কাজ করে ফেলে আমার মধ্যে আমূল একটা পরিবর্তন নিয়ে এলো। সারাজীবন আম্মু বকা দিয়ে যেটা আনতে পারে নি, বন্ধুর এই নীরব প্রতিবাদ দেখে সেই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, যেখানে সেখানে আর ময়লা ফেলবো না। কোনদিন না।
সেই থেকে শুরু। ডাস্টবিন ব্যবহার করতে ভুলি নি আর কোনদিন। আমার এই বন্ধুটির এক নীরব প্রতিবাদই আমার পরিবর্তনের সূতিকাগার হয়ে পড়লো। আমিও আশেপাশের কেউ কোন ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে রাখলেই চুপচাপ সেটা তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম।"
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.